মানুষের অন্ত্রে (নাড়ীতে) দুই ধরণের ইনফ্ল্যমেটরি বাওয়েল ডিজিজ (আইবিডি) বা জটিল প্রদাহ জনিত রোগ হয়। এর মধ্যে একটির নাম আলসারেটিভ কোলাইটিস ও অপরটির নাম ক্রন্’স ডিজিজ। এই দুটি রোগই নানাবিধ কারনের সামষ্টিক ফল। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে জেনেটিক, পরিবেশগত, খাদ্যাভ্যাসগত, জীবানু নিয়ন্ত্রিত, এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার ও নানা ধরণের নিয়ামকের যোগফল।
এই রোগের যেকোন একটি কারো হলে সেটা সাধারণত একেবারে ভালো হয়ে যায়না। এসব রোগীকে জীবনের বেশীরভাগ সময়ই কিছু না কিছু চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণের ভিতর থাকতে হয়। অনেকটা ডায়াবেটিস রোগের মত।
মানুষের নাড়ীর শেষ অংশে মোটা পায়খানার নাড়ী বা কোলন থাকে। কোলনের পরে মলাশয় বা রেক্টাম এবং তারপর এনাস বা মলদার থাকে। আলসারেটিভ কোলাইটিস নামক রোগটি সাধারনত রেক্টাম হতে শুরু হয়ে কোলনের দিকে ধাবিত হয়। এই রোগে প্রদাহের ফলে ঘা সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে বারবার পায়খানা হয়। অনেকের আমাশয়ের মত দেখা দেয়। অনেকের রক্ত আমও দেখা দেয়। ওজন কমে শরীর শুকিয়ে যেতে পারে। অবশ্য কোলন বা রেক্টামের ক্যান্সারেও এসব লক্ষণ হতে পারে। রোগ বেশী হলে জ্বর হতে পারে, পেটের নাড়ী ছিদ্র হয়ে পেট ফুলে যেতে পারে ও পেটে তীব্র ব্যাথা হতে পারে। অনেকের চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, জয়েন্টে বা অস্থিসন্ধিতে রোগ, লিভার সিরোসিস হতে পারে।
রক্ত পরীক্ষা, মল পরীক্ষা, কলোনোস্কোপি, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি পরীক্ষা রোগের অবস্থা ভেদে লাগতে পারে।
যতক্ষণ সম্ভব আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগে মেডিকেল চিকিৎসা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এজন্য বিভিন্ন প্রকার ঔষধ রয়েছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এসব চিকিৎসায় রোগ প্রশমিত থাকে। কিছু রোগীর সকল মেডিকেল চিকিৎসাতেও রোগ নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এসব ক্ষেত্রে শরীরের অবস্থা বেশী খারাপ হবার আগেই অপারেটিভ চিকিৎসা প্রয়োজন। অপারেশনে পুরা কোলন ও রেক্টাম ফেলে দিতে হয়। ক্ষুদ্রান্তের শেষ অংশ দিয়ে বিকল্প মলাশয় তৈরী করা হয়। এই অপারেশনের ফলে আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগ সম্পূর্ণরূপে সেরে যায়।
লেখক পরিচিতিঃ
ডাঃ তারিক আখতার খান
এমবিবিএস, এফসিপিএস (সার্জারী), এমএস (কলোরেক্টাল সার্জারী),
সহকারী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারী), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সিনিয়র কনসালটেন্ট, লাপারোস্কপিক ও কলোরেক্টাল সার্জারী, বিআরবি হাসপাতাল লিঃ, পান্থপথ, ঢাকা।