বাংলাদেশে ক্রন’স ডিজিজ রোগের চিকিৎসা।

Crohn’s disease treatment in Bangladesh.

মানুষের অন্ত্রে (নাড়ীতে) দুই ধরণের ইনফ্ল্যমেটরি বাওয়েল ডিজিজ (আইবিডি) বা জটিল প্রদাহ জনিত রোগ হয়। এর মধ্যে একটির নাম আলসারেটিভ কোলাইটিস ও অপরটির নাম ক্রন’স ডিজিজ। এই দুটি রোগই নানাবিধ কারনের সামষ্টিক ফল। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে ধুমপান, জেনেটিক, পরিবেশগত, খাদ্যাভ্যাসগত, জীবানু নিয়ন্ত্রিত, এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার ও নানা ধরণের নিয়ামকের যোগফল।

এই রোগের যেকোন একটি কারো হলে সেটা সাধারণত একেবারে ভালো হয়ে যায়না। এসব রোগীকে জীবনের বেশীরভাগ সময়ই কিছু না কিছু চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণের ভিতর থাকতে হয়। অনেকটা ডায়াবেটিস রোগের মত।

ক্রন’স ডিজিজ মুখ থেকে শুরু করে মলদার পর্যন্ত যেকোন স্থানেই হতে পারে। তবে ক্ষুদ্রান্তের শেষ ভাগে বেশী দেখা যায়। এই রোগে প্রদাহের ফলে ঘা সৃষ্টি হয়। এই ঘা কখনো কখনো নাড়ীর সবগুলি পর্দা ভেদ করে অন্য অঙ্গে ঢুকে ফিস্টুলা করতে পারে। আবার কারো কারো নাড়ীর আস্তরণ মোটা হয়ে টিউমারের মত সৃষ্টি করে নাড়ীর ছিদ্র বন্ধ করে খাবার বা পায়খানার গতি বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে রোগীর পেটে ব্যাথা হয় ও পেট ফুলে যায়। ক্রন’স ডিজিজ সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে পায়খানার অভ্যাস পাল্টে যেতে পারে। পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে। ওজন কমে শরীর শুকিয়ে যেতে পারে। অবশ্য কোলন বা রেক্টামের ক্যান্সারেও এসব লক্ষণ হতে পারে। অনেকের মুখে ঘা, বদ হজম, জ্বর, ক্লান্তি, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, জয়েন্টে বা অস্থিসন্ধিতে রোগ, পিত্ত পাথর, কিডনী পাথর ইত্যাদি হতে পারে।

রক্ত পরীক্ষা, মল পরীক্ষা, কলোনোস্কোপি, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি পরীক্ষা রোগের অবস্থা ভেদে লাগতে পারে।

যতক্ষণ সম্ভব ক্রন’স ডিজিজ রোগে মেডিকেল চিকিৎসা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এজন্য বিভিন্ন প্রকার ঔষধ রয়েছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এসব চিকিৎসায় রোগ প্রশমিত থাকে। কিছু রোগীর সকল মেডিকেল চিকিৎসাতেও রোগ নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এসব ক্ষেত্রে শরীরের অবস্থা বেশী খারাপ হবার আগেই অপারেটিভ চিকিৎসা প্রয়োজন। অপারেশনে বেশী আক্রান্ত স্থান ফেলে দিতে হয়। ক্রন’স ডিজিজ থেকে মলদারের ফিস্টুলা হলে সেটন পদ্ধতিতে পুজ বের করে দেয়ার পাশাপাশি বায়োলজিক’স (ইনফ্লিক্সিম্যাব) জাতীয় অত্যন্ত দামী ঔষধ তিন থেকে নয়বার পর্যন্ত দেয়া লাগতে পারে। এক কথায় ক্রন’স ডিজিজ রোগের ধরণের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকমের চিকিৎসা হতে পারে।

লেখক পরিচিতিঃ

ডাঃ তারিক আখতার খান

এমবিবিএস, এফসিপিএস (সার্জারী), এমএস (কলোরেক্টাল সার্জারী),

সহকারী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারী), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

সিনিয়র কনসালটেন্ট, লাপারোস্কপিক ও কলোরেক্টাল সার্জারী, বিআরবি হাসপাতাল লিঃ, পান্থপথ, ঢাকা।

Leave a Comment