কোলন ক্যান্সার কেন হয় এবং কাদের ঝুঁকি বেশি?

কোলন ক্যান্সার বা বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার এখন বিশ্বের অন্যতম সাধারণ ক্যান্সারগুলোর একটি। বর্তমানে বাংলাদেশেও এই রোগ দিনদিন বাড়ছে। এর মূল কারণ হলো পরিবর্তিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা। এছাড়াও নানাবিধ কারণ রয়েছে, পরিবেশ দূষণ, কেমিকেল যুক্ত খাবার ইত্যাদি।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ ধীরে ধীরে শুরু হয়, তাই সময়মতো লক্ষণ বোঝা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। এজন্য কোলন ক্যান্সার হওয়ার সঠিক কারণ এবং কোন বয়সে বা কাদের কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, সেটা জানা জরুরি। এই ব্লগে আমরা আলোচন করব, কোলন ক্যান্সার কেন হয় এবং কাদেস্র ঝুঁকি বেশি!

কোলন ক্যান্সার কারণ এবং ঝুঁকি

কোলন ক্যান্সার কীভাবে হয়?

কোলন ক্যান্সার মূলত বৃহদান্ত্রের ভেতরের আস্তরণে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি থেকে শুরু হয়। প্রথমে এই কোষগুলো ছোট টিউমার বা পলিপ আকারে দেখা দেয়। সময়ের সাথে কিছু পলিপ ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। আমাদের কোলন বা বৃহদান্ত্র খাবারের বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে মল তৈরি করে। এখানে কোনো কোষ যদি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করে, ধীরে ধীরে সেটি ক্যান্সার কোষে রূপ নেয়। প্রথমে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না, তাই অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পারেন না।

কোলন ক্যান্সার কীভাবে হয়?

কোলন ক্যান্সারের সাধারণ কারণসমূহ

কোলন ক্যান্সার হঠাৎ করে হয় না, বরং ধীরে ধীরে কিছু অভ্যন্তরীণ ও জীবনধারাজনিত কারণে গড়ে ওঠে। অস্বাস্থ্যকর খাবার, কোষ্ঠকাঠিন্য, ধূমপান, এবং পারিবারিক ইতিহাস এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। এসব কারণ সম্পর্কে জানা থাকলে রোগ প্রতিরোধ করা অনেক সহজ হয়।

১. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

যেসব খাবারে ফাইবার কম এবং চর্বি বা প্রক্রিয়াজাত মাংস বেশি থাকে, সেগুলো কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন: লাল মাংস, সসেজ, বার্গার, ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড ইত্যাদি। এছাড়া ফলমূল ও সবজি কম খাওয়াও অন্ত্রের স্বাস্থ্য খারাপ করে।

২. কোষ্ঠকাঠিন্য ও অনিয়মিত টয়লেট অভ্যাস

দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে কোলনের ভেতরে বিষাক্ত পদার্থ জমে থেকে কোষে ক্ষতি করতে পারে। এভাবেই ধীরে ধীরে টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

৩. পারিবারিক ইতিহাস

যদি পরিবারের কারও কোলন ক্যান্সার বা পলিপের ইতিহাস থাকে, তাহলে ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এমন ক্ষেত্রে ৪০ বছর বয়সের আগেই স্ক্রিনিং করানো উচিত।

৪. বয়স

৫০ বছর পার হওয়ার পর কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে তরুণদের মধ্যেও এটি বাড়ছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে।

৫. স্থূলতা ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা

ওজন বেশি থাকা বা নিয়মিত ব্যায়াম না করা কোলনের কার্যকারিতা কমায়। ফলে কোষে চাপ পড়ে এবং ক্যান্সার কোষ গঠনের সম্ভাবনা বাড়ে।

৬. ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন

ধূমপানের ক্ষতিকর রাসায়নিক কোলন কোষে পৌঁছে ডিএনএ ক্ষতি করতে পারে। অ্যালকোহলও শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে।

৭. ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স

যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা দীর্ঘসময় বেশি থাকে, তাদের শরীরে কোষ বিভাজন বেশি হয়—যা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৮. দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ

যেমন: আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রোনস ডিজিজ। এই রোগগুলোতে অন্ত্রের কোষে বারবার প্রদাহ হয়, যা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।

কাদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি?

কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি সবার এক রকম নয়। বয়স, খাদ্যাভ্যাস, পারিবারিক ইতিহাস ও জীবনযাপনের অভ্যাস এর ঝুঁকি অনেকটা নির্ধারণ করে। যারা অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, ব্যায়াম করেন না বা পরিবারের কারও এই রোগের ইতিহাস আছে, তাদের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।

  • বয়স ৫০ বা তার বেশি
  • পরিবারের কারও কোলন ক্যান্সারের ইতিহাস আছে
  • যাদের নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য বা রক্তপাত হয়
  • যাদের ওজন বেশি বা শারীরিক পরিশ্রম কম
  • যারা ধূমপান, মদ্যপান করেন
  • যাদের আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রোনস ডিজিজ আছে
  • যাদের খাবারে ফাইবার কম এবং লাল মাংস বেশি

কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ

কোলন ক্যান্সারের শুরুতে অনেক সময় কোনো বড় উপসর্গ দেখা যায় না, তাই অনেকেই দেরিতে বিষয়টি বুঝতে পারেন। তবে শরীরে কিছু ছোট পরিবর্তন, যেমন মলত্যাগের অভ্যাস বদলে যাওয়া, অজানা রক্তপাত বা হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, এই রোগের প্রাথমিক সংকেত হতে পারে। সময়মতো লক্ষণ চেনাই বাঁচার সবচেয়ে বড় সুযোগ। নিম্নে কিছু লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:

  • মলত্যাগের সময় রক্তপাত
  • পেট ব্যথা বা ফুলে থাকা
  • হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
  • মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন
  • ক্লান্তি বা রক্তশূন্যতা

কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়

কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব, যদি আমরা জীবনযাপনে কিছু সহজ পরিবর্তন আনি। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, এবং সময়মতো স্ক্রিনিং টেস্ট কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে। সচেতন থাকাই এ রোগ থেকে সুরক্ষার প্রথম ধাপ।

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত ফল, সবজি ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খান
  • লাল মাংস ও ফাস্টফুড কমান
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • বয়স ৪৫ পার হলে নিয়মিত কোলনোস্কপি পরীক্ষা করুন

একজন কোলন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

ডা. তারিক আখতার খান বাংলাদেশের অভিজ্ঞ কলোরেক্টাল সার্জন, যিনি কোলন, রেকটাল ও অ্যানাল রোগের চিকিৎসায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তিনি বলেন, “কোলন ক্যান্সার অনেক সময় নীরবে বাড়ে। তাই প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা। নিয়মিত স্ক্রিনিং ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।”

যদি আপনি নিয়মিত রক্তপাত, কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তাহলে দ্রুত পরীক্ষা করুন। সময়মতো সনাক্ত হলে কোলন ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য।

কোলন ক্যান্সার সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর

কোলন ক্যান্সার হয় যখন বৃহদান্ত্রের ভেতরের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে এবং পলিপ তৈরি করে। সময়ের সাথে কিছু পলিপ ক্যান্সারে রূপ নেয়। এর মূল কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর খাবার, কোষ্ঠকাঠিন্য, ধূমপান, স্থূলতা, ও পারিবারিক ইতিহাস।

৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা, যাদের পরিবারে কোলন ক্যান্সারের ইতিহাস আছে, এবং যারা নিয়মিত ধূমপান, মদ্যপান বা ফাস্টফুড খান—তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এছাড়া আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রোনস ডিজিজ থাকা ব্যক্তিরাও ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রথম দিকে কোনো লক্ষণ না থাকলেও ধীরে ধীরে রক্তপাত, কোষ্ঠকাঠিন্য, মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, ওজন হ্রাস, পেট ব্যথা বা ফুলে থাকা দেখা দিতে পারে। এসব লক্ষণ উপেক্ষা না করাই ভালো।

হ্যাঁ, যায়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার, এবং সময়মতো কোলনোস্কপি টেস্ট কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখে।

যদি মলত্যাগের সময় রক্তপাত, দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য, বা অজানা কারণে ওজন কমে যায়—তাহলে দেরি না করে কলোরেক্টাল সার্জন এর পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে কোলন ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য।
Call Receptionist
Call for Appointment
Make An Appoinment

Appointment Scheduling Time: 9 AM - 10 PM

  1. Dhanmondi Diagnostic & Consultation Center
  2. Impulse Hospital
  3. Labaid Cancer Hospital
Arrow