কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য এমন একটি সমস্যা যা বয়স, খাদ্যাভ্যাস বা জীবনযাপনের কারণে যেকোনো মানুষকে ভোগাতে পারে। এটি শুধু অস্বস্তি তৈরি করে না, দীর্ঘমেয়াদে হেমোরয়েড (পাইলস), ফিশার বা অন্যান্য পাচনতন্ত্রের জটিলতার কারণও হতে পারে। তাই সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, যাতে সমস্যা বাড়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

বাংলাদেশে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি খুব সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা, যা শহর ও গ্রাম উভয় এলাকাতেই সমানভাবে দেখা যায়। অনেকেই লজ্জা বা অবহেলার কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না, ফলে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়। অথচ কিছু সহজ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়মিত জীবনযাপন মেনে চললেই এই সমস্যাকে অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য কী?

আমাদের হজম প্রক্রিয়া ঠিকমতো কাজ করলে শরীর স্বাভাবিকভাবে বর্জ্য বের করে দেয়। কিন্তু কোনো কারণে এই প্রক্রিয়া ধীর হয়ে গেলে মলত্যাগ কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থাই কোষ্ঠকাঠিন্য নামে পরিচিত, যা সাময়িকও হতে পারে আবার দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য তখন হয় যখন মল শক্ত, শুষ্ক এবং স্বাভাবিকের তুলনায় কম পরিমাণে বের হয়। সাধারণভাবে বলা হয়, সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ হলে সেটি কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে ধরা হয়। তবে শুধু সংখ্যা নয়, মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ লাগা, অসম্পূর্ণতার অনুভূতি বা পেটের ফাঁপাভাব থাকাও এর লক্ষণ হতে পারে। এটি শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই হতে পারে এবং সময়মতো কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা না নিলে আরও জটিল রোগে পরিণত হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সাধারণ কারণ

কোষ্ঠকাঠিন্যের পেছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করে, যার বেশিরভাগই আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণগুলো জানা থাকলে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সহজ হয়। নিচে প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • ফাইবারের অভাব: আঁশযুক্ত খাবার মল নরম রাখে ও অন্ত্রের গতি বাড়ায়। পর্যাপ্ত শাকসবজি, ফলমূল ও পূর্ণ শস্য না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
  • পানির স্বল্পতা: শরীরে পানি কম থাকলে মল শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়, যা বের হতে অসুবিধা হয়।
  • শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা নড়াচড়া কম করা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম কমিয়ে দেয়।
  • মানসিক চাপ: দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস পাচনতন্ত্রের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে।
  • ওষুধের প্রভাব: কিছু ওষুধ যেমন আয়রন সাপ্লিমেন্ট, এন্টাসিড, মানসিক রোগের ঔষধ, পেইনকিলার অন্ত্রের কার্যক্রম ধীর করে দেয়।
  • গর্ভাবস্থা: হরমোন পরিবর্তন এবং বর্ধিত গর্ভের চাপ অন্ত্রের গতি কমিয়ে দেয়।
  • পাচনতন্ত্রের রোগ: IBS(C) রোগ, হাইপোথাইরয়েডিজমসহ বিভিন্ন হজমজনিত রোগও কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ

যদিও কোষ্ঠকাঠিন্যের মূল লক্ষণ মলত্যাগের অসুবিধা, তবে এর আরও কিছু উপসর্গ আছে যা বুঝতে পারলেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

  • সপ্তাহে ৩ বারের কম মলত্যাগ
  • মল শক্ত, শুকনো ও ছোট আকারের হওয়া
  • মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োজন হওয়া
  • মলত্যাগের পর অসম্পূর্ণতার অনুভূতি থাকা
  • পেটে ব্যথা, ভারীভাব বা ফাঁপাভাব

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কার্যকর ঘরোয়া উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বিরক্তিকর ও অসহনীয় রোগ, যা আমাদের স্বাভাবিক জনজীবনকে দারুনভাবে ব্যহত করে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়, এবং নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলা যায়, তাহলে সহজেই আরোগ্য সম্ভব। এখানে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কিছু কার্যকারী ঘরোয়া টিপস উল্লেখ করা হলো:

১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। পানি মল নরম রাখে এবং অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়ায়।

  • প্রতিদিন অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
  • সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানি পান করলে অন্ত্র দ্রুত সক্রিয় হয়।

২. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন

খাদ্যাভ্যাসের সামান্য পরিবর্তনেই বড় উপকার পাওয়া যায়।

  • সবুজ শাক, গাজর, শসা, আপেল, পেয়ারা, পেঁপে, কলা, ডাল, ওটস ও পূর্ণ শস্যের রুটি খান।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত চা–কফি ও চিনি এড়িয়ে চলুন।

৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং হজমশক্তি উন্নত করে।

  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, জগিং বা যোগব্যায়াম করুন।
  • দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে মাঝে মাঝে উঠে হাঁটুন।

৪. নিয়মিত সময়ে মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলুন

নিয়মিত অভ্যাস অন্ত্রকে সময়মতো কাজ করতে সাহায্য করে।

  • সকালে নাস্তার আগে বা পরে নির্দিষ্ট সময়ে টয়লেটে যান।
  • মল চেপে রাখা এড়িয়ে চলুন।

৫. ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করুন

  • ইসবগুলের ভুষি: রাতে শোবার আগে ১–২ চামচ ইসবগুলের ভুষি গরম পানিতে মিশিয়ে খান।
  • পেঁপে ও কলা: আঁশ ও এনজাইম সমৃদ্ধ, যা মল নরম করে।
  • গরম দুধে মধু: হজমে সহায়ক এবং অন্ত্রের গতি বাড়ায়।

৬. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

মানসিক চাপ হজমে প্রভাব ফেলে, তাই স্ট্রেস কমানো জরুরি।

  • যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, বই পড়া বা গান শোনা মানসিক প্রশান্তি আনে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণত ঘরোয়া উপায়ে ঠিক হয়ে যায়। তবে সঠিক যত্নের অভাবে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে। নিচে উল্লেখ করা হলো কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • দুই সপ্তাহের বেশি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে
  • মলে রক্ত দেখা যায়
  • হঠাৎ ওজন কমে যায়
  • তীব্র পেট ব্যথা বা বমি হয়

একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন

বিশেষজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জন ডা. তারিক আখতার খান

যদি কোষ্ঠকাঠিন্য ২–৩ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, মলে রক্ত দেখা যায় বা তীব্র পেট ব্যথা হয়, তবে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ ডা. তারিক আখতার খানের পরামর্শ নিন। তিনি একজন অভিজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জন, যিনি আধুনিক চিকিৎসা ও ব্যক্তিগত যত্নের মাধ্যমে রোগীর সমস্যার সমাধান করে থাকেন। সঠিক পরীক্ষা ও ডায়েট প্ল্যানের মাধ্যমে

কোষ্ঠকাঠিন্য সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

সাধারণত হালকা কোষ্ঠকাঠিন্য কয়েক দিনের মধ্যে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে সেরে যায়। তবে যদি ২–৩ সপ্তাহেও না সারে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিদিন মলত্যাগ না হওয়া সব সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ নয়। সপ্তাহে ৩ বারের কম মলত্যাগ বা মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ ও অস্বস্তি থাকলে সেটি কোষ্ঠকাঠিন্য ধরা হয়।
আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল (পেঁপে, কলা, আপেল), পূর্ণ শস্য, ডাল, ওটস এবং প্রচুর পানি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
হ্যাঁ, ইসবগুলের ভুষি মল নরম করে এবং অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়ায়। রাতে শোবার আগে কুসুম গরম পানি বা দুধের সাথে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
দীর্ঘমেয়াদে কোষ্ঠকাঠিন্য অবহেলা করলে হেমোরয়েড, ফিশার, পাইলস এমনকি অন্ত্রের অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
Call Receptionist
Call for Appointment
Make An Appoinment

Appointment Scheduling Time: 9 AM - 10 PM

  1. Dhanmondi Diagnostic & Consultation Center
  2. Impulse Hospital
  3. Labaid Cancer Hospital
Arrow