কোলনস্কপি খরচ কত? বাংলাদেশে কোলনস্কপির সম্পূর্ণ গাইড

বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরাপদ খাবার এবং সঠিক পরিচ্ছন্নতার অভাবে মানুষ পেটের নানা রোগ, রক্তপাত বা কোলনে নানা জটিলতার শিকার হচ্ছে। এসকল সমস্যা মূলত বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবের ফলেই হয়ে থাকে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, এ সকল রোগের জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক চিকিৎসা। আর সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা করার পদ্ধতিই হচ্ছে কোলনস্কপি। যার মাধ্যমে এসব সমস্যা দ্রুত ও নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা হয়ে থাকে। এটি এক ধরনের আধুনিক চিকিৎসা পরীক্ষা, যার মাধ্যমে বৃহদান্ত্র বা কোলনের ভেতর দেখা হয় একটি বিশেষ ক্যামেরাযুক্ত টিউবের সাহায্যে।

বাংলাদেশে কোলনস্কপির খরচ

অনেকে ভাবেন কোলনস্কপি খুব জটিল বা ব্যথাদায়ক, আসলে তা নয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এটি বেশ নিরাপদ ও দ্রুত সম্পন্ন হয়। এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত জানব কোলনস্কপি কী, কেন করা হয়, কীভাবে করা হয়, কোলনস্কপি খরচ কত? এবং কোথায় করানো যায়।

কোলনস্কপি কী এবং কেন করা হয়?

কোলনস্কপি হলো এমন একটি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা যার মাধ্যমে বৃহদান্ত্র (large intestine), মলাশয় (rectum) এবং মলদ্বার (Anal canal) এর অভ্যন্তর দেখা যায় একটি ক্যামেরা সংযুক্ত চিকন টিউবের মাধ্যমে। চিকিৎসক এই পরীক্ষায় অন্ত্রের ভেতরে থাকা পলিপ, আলসার, প্রদাহ, ক্যান্সার বা রক্তপাতের উৎস চিহ্নিত করতে পারেন।

কেন প্রয়োজন হতে পারে:

নোট: ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত কোলন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের অংশ হিসেবেও কোলনস্কপি পরামর্শ দেওয়া হয়।

কোলনস্কপি কীভাবে করা হয়?

অনেকে ভাবেন এটি অপারেশনের মতো কিছু — কিন্তু না, এটি একটি কম ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি। চিকিৎসক একটি সরু, নমনীয় টিউব (কোলনোস্কোপ) মলদ্বার দিয়ে কোলনে প্রবেশ করান। টিউবের মাথায় ক্যামেরা ও আলো থাকে, যা স্ক্রিনে কোলনের ভেতরের অবস্থা স্পষ্টভাবে দেখায়।

কোলনস্কপি কীভাবে করা হয়
  • সময় লাগে: সাধারণত ২০ থেকে ৪৫ মিনিট।
  • অবস্থা: বেশিরভাগ সময় হালকা সিডেশন (ঘুমের ইনজেকশন) দেওয়া হয়, যাতে রোগী ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব না করেন।

বাংলাদেশে কোলনস্কপি খরচ কত?

এখন আসি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে, সকল রোগীর বা তার পরিবারের কাছে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়, তা হচ্ছে, কোলনস্কপি করতে কত টাকা লাগে? খরচ আসলে এক বাক্যে বলা যায় না, বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, হাসপাতাল, চিকিৎসক, অ্যানেসথেশিয়া ব্যবহারের ধরন এবং বায়োপসি করা হবে কি না, তার ওপর নির্ভর করে। নিচে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোলনস্কপির একটা আনুমানিক খরচের তালিকা দেওয়া হলো:

বিভাগ বিবরণ আনুমানিক খরচ (টাকা)
সরকারি হাসপাতাল সাধারণ কোলনস্কপি (অ্যানেসথেশিয়া ছাড়া) ২,০০০ – ৪,০০০
বেসরকারি ক্লিনিক স্ট্যান্ডার্ড কোলনস্কপি ৬,০০০ – ১০,০০০
প্রিমিয়াম হাসপাতাল অ্যানেসথেশিয়া (সেডেশন) সহ ১০,০০০ – ১৮,০০০
বায়োপসি / পলিপ অপসারণসহ অতিরিক্ত চার্জসহ ১৫,০০০ – ২৫,০০০

কোলনস্কপি করার আগের প্রস্তুতি

কোলনস্কপি পরীক্ষাটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে হলে কোলন পরিষ্কার থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য চিকিৎসক কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন।

কোলনস্কপি করার আগের প্রস্তুতি
  • খাবার নিয়ন্ত্রণ: পরীক্ষার আগের দিন শুধু তরল খাবার যেমন পানি, স্যুপ, জুস ইত্যাদি গ্রহণ করতে হয়।
  • ওষুধ সেবন: অন্ত্র পরিষ্কার করার জন্য নির্দিষ্ট ল্যাক্সেটিভ বা ওষুধ নিতে হয়।
  • খালি পেট থাকা: পরীক্ষার দিন সকালে কিছু খাওয়া বা পান করা যাবে না।
  • ওষুধের তালিকা জানানো: রক্ত পাতলা করার বা ইনসুলিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণকারীরা অবশ্যই চিকিৎসককে জানাবেন।

কোলনস্কপির সময় ও পরে ব্যথা হয় কি?

এই প্রশ্নটি প্রায় সবাই করেন। আসলে আধুনিক কোলনস্কপি পদ্ধতিতে ব্যথা প্রায় থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেডেশন বা হালকা অ্যানেসথেশিয়া দেওয়া হয়, যাতে রোগী আধা-ঘুমন্ত অবস্থায় থাকেন। অ্যানেসথেশিয়া ছাড়া করলে কিছুটা চাপ বা গ্যাস ফোলাভাব অনুভূত হতে পারে, তবে তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চলে যায়।

পরীক্ষার পর ৩০–৬০ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যায়। সেদিন ভারী খাবার না খেয়ে হালকা তরল খাবার খাওয়াই ভালো।

কোলনস্কপি করার আগে একজন কোলোরেক্টাল সার্জন এর পরামর্শ নিন

কোলনস্কপি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, তবে এটি করার আগে একজন অভিজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জনের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ সবার ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা একভাবে প্রয়োজন হয় না—কারও জন্য শুধু ওষুধে সমস্যার সমাধান হয়, আবার কারও জন্য কোলনস্কপি প্রয়োজন হয় দ্রুত নির্ণয়ের জন্য।

বাংলাদেশে এখন কোলোরেক্টাল সার্জনরা উন্নত যন্ত্রপাতি ও আধুনিক কৌশলে কোলনস্কপি পরিচালনা করেন। ডা. তারিক আখতার খান, দেশের অন্যতম অভিজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জন হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কোলন, রেকটাম ও অ্যানাল ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা ও কোলনস্কপি করে আসছেন।

কোলনস্কপির খরচ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নত্তোর

বাংলাদেশে কোলনস্কপির গড় খরচ সাধারণত ৬,০০০ থেকে ১৮,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়। সরকারি হাসপাতালে খরচ তুলনামূলক কম (২,০০০–৪,০০০ টাকা), আর প্রিমিয়াম বেসরকারি হাসপাতালে সেডেশন বা বায়োপসি যুক্ত থাকলে খরচ বেড়ে যায়।

খরচ ভিন্ন হয় হাসপাতালের মান, চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা, ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, অ্যানেসথেশিয়া ও বায়োপসির প্রয়োজনীয়তার ওপর। যে হাসপাতালে উন্নত ভিডিও কোলনোস্কোপ ও নিরাপদ সেডেশন সুবিধা আছে, সেখানকার চার্জ কিছুটা বেশি হয়।

হ্যাঁ, যদি পরীক্ষার সময় বায়োপসি (টিস্যু সংগ্রহ) করা হয় বা পলিপ অপসারণ করা হয়, তাহলে অতিরিক্ত চার্জ যোগ হয়। সাধারণত ৩,০০০–১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি খরচ হতে পারে।

হ্যাঁ, অনেক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে “কোলনস্কপি প্যাকেজ” হিসেবে পরীক্ষা করা হয়, যেখানে পরীক্ষার সঙ্গে সেডেশন, রিপোর্ট, ও চিকিৎসক পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এ ধরনের প্যাকেজ সাধারণত ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে বর্তমানে বেশ কিছু অভিজ্ঞ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ও কোলোরেক্টাল সার্জন কোলনস্কপি করে থাকেন। তবে অভিজ্ঞতা, নির্ভুলতা এবং রোগীর নিরাপত্তার দিক থেকে ডা. তারিক আখতার খান অনেকের কাছে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য নাম।
Call Receptionist
Call for Appointment
Make An Appoinment

Appointment Scheduling Time: 9 AM - 10 PM

  1. Dhanmondi Diagnostic & Consultation Center
  2. Impulse Hospital
  3. Labaid Cancer Hospital
Arrow