পাইলস বা হেমোরয়েড এমন একটি সমস্যা যা অনেকের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এটি মূলত মলদ্বারের ভেতরে বা
বাইরে ফুলে ওঠা রক্তনালী। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য, বেশি সময় বসে থাকা, বা ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে
এটি দেখা দেয়। পাইলসের
চিকিৎসার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসও এখানে বড় ভূমিকা রাখে। সঠিক খাবার পাইলসের ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে
সাহায্য করে, আর ভুল খাবার সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।
বাংলাদেশের মানুষের ক্ষেত্রে বলা যায়, পাইলস বৃদ্ধিতে অন্যতম একটি বড় কারণ হচ্ছে, খাদ্যাভ্যাস।
আমরা খাবার পছন্দের ক্ষেত্রে যেটা মজা লাগে সেটাকে গুরুত্ব দেই। যেটা স্বাস্থ্যকর এবং এক্টু কম
স্বাদ, সেটাকে কম গুরুত্ব দেই।
যার কারণে, বেশি মসলাদার, তেলে ভাজা, অতিরিক্ত ঝাল খাবার ছাড়া আমাদের চলেই না। আর এরকম কিছু কারণেই
পাইলস থেকে মুক্তি মিলছে না। চলুন তাহলে জেনে নেই,
পাইলস হলে কী খাবেন আর কী
খাবেন না?
পাইলসের সময় খাবার নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাবার খেলে ব্যথা, জ্বালা ও কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকটা কমে যায়। আঁশযুক্ত,
হালকা ও সহজপাচ্য খাবার এই সময় শরীরকে আরাম দেয়
এবং মলত্যাগ সহজ করে। নিচে বেশ কিছু খাবারের বিষয়ে উল্লেখ করা হলো:
১. ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার
পাইলস রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার। এটি মল নরম রাখে ও
সহজে বের হতে সাহায্য করে।
যেসব খাবারে ফাইবার বেশি আছে:
ঢেঁড়স, লাউ, শসা, করলা, পুঁই শাক, পালং শাক
কলা, পেঁপে, আপেল, পেয়ারা
ওটস, গমের আটা, ব্রাউন রাইস
মসুর ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি
টিপস: প্রতিদিন অন্তত ২৫–৩০ গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করা উচিত। পানি কম খেলে ফাইবারের
কোনো লাভ হবে না, বরং সমস্যা বাড়তে পারে।
২. পর্যাপ্ত পানি পান
শরীরে পানি কমে গেলে মল শক্ত হয়ে যায়, ফলে পাইলসের ব্যথা ও রক্তপাত বেড়ে যায়। দিনে অন্তত
৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে
হজমে উপকার হয়।
৩. ফলমূল ও সবজি
তাজা ফলমূল ও সবজি শুধু আঁশই দেয় না, এতে থাকে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের প্রদাহ
কমায়। প্রতিদিন অন্তত দুই বেলা সবজি এবং এক-দুই ধরনের ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৪. প্রোবায়োটিক খাবার
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। দই, টক দই, ঘরে
তৈরি লাচ্ছি, ইসবগুলের ভুসি এগুলো ভালো প্রোবায়োটিক উৎস।
৫. নরম ও হালকা খাবার
পাইলসের সময় ঝাল বা ভারী খাবারের পরিবর্তে হালকা রান্না করা খাবার খাওয়া ভালো। যেমন:
নরম ভাত
ডাল-সবজি
মাছ বা মুরগির পাতলা ঝোল
৬. ইসবগুলের ভুসি
ইসবগুলের ভুসি পানি শোষণ করে মল নরম রাখে। এক গ্লাস পানিতে ১–২ চা চামচ ইসবগুল মিশিয়ে রাতে
খেলে সকালে মলত্যাগ সহজ হয়।পৌঁছে ডিএনএ ক্ষতি করতে পারে। অ্যালকোহলও শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে
ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে।
পাইলস হলে কী কী খাওয়া যাবে না?
পাইলস হলে খাবারের বিষয়ে একটু সতর্ক থাকতে হয়। কিছু খাবার আছে যেগুলো ব্যথা, ফোলাভাব ও রক্তপাত
আরও বাড়িয়ে তোলে। যেমন ঝাল-মসলা, ভাজাপোড়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায় এমন খাবার—এসব এড়িয়ে
চলাই সবচেয়ে ভালো।
এগুলো শরীরের পানিশূন্যতা ঘটায় এবং রক্ত চলাচলে প্রভাব ফেলে। ফলে পাইলসের রক্তপাত বাড়তে পারে।
৩. লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার
গরু বা খাসির মাংস হজমে সময় নেয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে। সসেজ, ফ্রোজেন ফুড, ইনস্ট্যান্ট
নুডলস এসবও এড়িয়ে চলা উচিত।
৪. কম পানি খাওয়া
অনেকে শুধু আঁশ খেয়ে মনে করেন মল নরম হবে, কিন্তু পানি কম খেলে ঠিক উল্টো হয়। ফলাফল—মল শক্ত
হয়ে যায়, চাপ পড়ে পাইলসে।
৫. অতিরিক্ত কফি বা চা
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় শরীরে পানি কমিয়ে দেয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে। দিনে এক কাপ খাওয়া ঠিক
আছে, তবে তার বেশি নয়।
৬. দুগ্ধজাত খাবার (যদি হজমে সমস্যা হয়)
অনেকের দুধ বা চিজ খেলে পেট ফেঁপে যায় বা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। যদি এমনটা হয়, তাহলে কিছুদিন বাদ
দিন।
সহজে পাইলস থেকে মুক্তি পেতে করণীয়
পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন নয়, যদি আপনি একটু সচেতন হন। নিয়মিত পানি পান, আঁশযুক্ত খাবার
খাওয়া, ও টয়লেটের অভ্যাস ঠিক রাখলে সহজেই এ সমস্যা কমে আসে। জীবনধারায় ছোট কিছু পরিবর্তনই পাইলস
থেকে দীর্ঘস্থায়ী স্বস্তি দিতে
পারে। যেসব অভ্যাস করতে পারেন:
টয়লেটে যাওয়ার সময় চাপ দেবেন না
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকবেন না
হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করুন
নিয়মিত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি রাখুন
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না
পাইলস বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া কি জরুরি?
হ্যাঁ, পাইলসের সমস্যা যদি অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায়, তখন আর খাবার মেইন্টেইন করে খুব একটা ফায়দা
পাওয়া যায় না। যার জন্য দরকার দ্রুত চিকিৎসার, তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি। অনেকেই
প্রথমে লজ্জা পেয়ে ঘরোয়া উপায়ে
চিকিৎসা করার চেষ্টা করেন, কিন্তু এতে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। যদি মলত্যাগের সময় রক্তপাত হয়,
তীব্র ব্যথা বা ফুলে ওঠা দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে কলোরেক্টাল সার্জন বা পাইলস
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে
যাওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শুধু ওষুধ দেন না, তিনি রোগের স্তর নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা করেন—যেমন
ওষুধ, ব্যান্ড লিগেশন, বা লেজার সার্জারি। সময়মতো
চিকিৎসা নিলে জটিলতা কমে যায়
এবং স্থায়ীভাবে পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।
পাইলস মূলত মলদ্বারের রক্তনালী ফুলে যাওয়ার কারণে হয়। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য, বারবার
চাপ দেওয়া, দীর্ঘসময় বসে থাকা বা গর্ভাবস্থায় চাপ বৃদ্ধি এর প্রধান কারণ।
না, সব সময় সার্জারি লাগে না। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওষুধ, ও নিয়মিত
পানি পানেই পাইলস নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে জটিল বা রক্তপাতযুক্ত ক্ষেত্রে সার্জারি
প্রয়োজন হতে পারে।
আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, ওটস, ব্রাউন রাইস, এবং পর্যাপ্ত পানি পাইলসের জন্য
সবচেয়ে ভালো। এগুলো মল নরম রাখতে সাহায্য করে।
হ্যাঁ, যদি সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া হয় এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা যায়—তাহলে পাইলস
পুরোপুরি সারানো সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার ও টয়লেট অভ্যাস এতে বড়
ভূমিকা রাখে।
যদি মলদ্বারে ব্যথা, রক্তপাত, বা ফোলাভাব কয়েকদিনের বেশি থাকে, তাহলে দেরি না করে
পাইলস বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে
পারে।
পাইলস থেকে নিরাময় পেতে চিকিৎসা নিন।
অস্বস্তিকে বিদায় জানান - আমরা সাহায্য করতে এখানে আছি!
Discover comprehensive and effective colon and rectal polyp treatment in Bangladesh with Prof. Dr. Tariq Akhtar Khan. Get advanced care and personalized treatment now!
Get safe and effective APC & formalin therapy for radiation proctitis in Bangladesh from colorectal surgeon Professor Dr. Tariq Akhtar Khan. Book an appointment today!