বাংলাদেশে এখন অনেক মানুষ ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম বা
IBS সমস্যায় ভুগছেন। পেট ব্যথা, গ্যাস,
কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানার মতো সমস্যা দেখা দিলে
অনেকেই বুঝতে পারেন না যে এটি আইবিএস হতে পারে।
আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (Irritable
Bowel Syndrome) হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী
হজমজনিত সমস্যা, যেখানে পেট ব্যথা, গ্যাস, ফোলাভাব,
কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
এটি সংক্রামক নয়, কিন্তু জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের
সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
এই রোগ দীর্ঘমেয়াদী হলেও জীবনযাত্রা ও খাবার নিয়ন্ত্রণের
মাধ্যমে সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। প্রতিদিনের
খাদ্যাভ্যাসে শৃঙ্খলা ও সচেতনতা থাকলে
ওষুধের উপর নির্ভরতা অনেকটাই কমে যায়।
এই ব্লগে আমরা আইবিএস রোগীর খাবার তালিকা, কোন খাবার
উপকারী, আর কোনগুলো এড়িয়ে চলবেন তা নিয়ে
বিস্তারিত তুলে ধরছি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. তারিক আখতার খান
বলেন, “আইবিএস রোগীকে ওষুধের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়
খাবার ও মানসিক নিয়মে। বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থা (WHO) ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য
গবেষণা অনুযায়ী,
প্রধান বিশেষত্ব:
সারা বিশ্বে প্রায় ১০% থেকে ১৫%
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ আইবিএসে
ভুগছেন।
এশিয়া অঞ্চলে এই হার কিছুটা বেশি, বিশেষ করে নগর
জীবনের ব্যস্ততা, মানসিক চাপ ও খাবারের অনিয়মের
কারণে।
বাংলাদেশে আনুমানিক ৮–১০% মানুষ, অর্থাৎ প্রায়
১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি ব্যক্তি, এই সমস্যায়
ভুগছেন বলে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
কোলোরেক্টাল রোগের চিকিৎসায় ১৫ বছরেরও বেশি
অভিজ্ঞতা
নারীদের মধ্যে এর প্রকোপ পুরুষদের তুলনায় বেশি দেখা
যায়।
WHO ও Mayo Clinic-এর মতে, আইবিএস সম্পূর্ণ
নিরাময়যোগ্য না হলেও, সঠিক খাবার, মানসিক ভারসাম্য, ও
জীবনযাত্রার নিয়ম মেনে চললে উপসর্গ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে
রাখা সম্ভব।
আইবিএস রোগ কী এবং
কেন হয়?
আইবিএস (Irritable Bowel Syndrome) হলো
একটি হজমজনিত দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা যেখানে অন্ত্রের কাজ
ঠিকভাবে হয় না। এতে পেটে ব্যথা, ফোলাভাব, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য
বা ডায়রিয়ার মতো রোগ দেখা দিতে পারে। আইবিএস রোগ
সংক্রামক নয়, কিন্তু সঠিক জীবনযাপন ও ডায়েটের মাধ্যমে
অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
আইবিএসের সাধারণ কারণসমূহ:
সারা বিশ্বে এই রোগের মূল কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি,
তবে কয়েকটি বিষয় এটিকে বাড়িয়ে দেয়, আর তা হলো:
মানসিক চাপ/স্ট্রেস ও উদ্বেগ
অনিয়মিত ঘুম
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
বংশগত কারণ
অতিরিক্ত চা, কফি, বা ফাস্ট ফুড খাওয়া
দুধ বা গ্লুটেনজাত খাবারে সংবেদনশীলতা
হরমোনাল পরিবর্তন (বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে)
আইবিএস রোগীর খাবার তালিকা:
কোন খাবার খাবেন আর কোনগুলো এড়িয়ে চলবেন
আইবিএস রোগীদের জন্য খাবার নির্বাচন খুব সতর্কভাবে
করতে হয়। কারণ যেসব খাবার সহজপাচ্য, কম তেল-ঝাল এবং কম
গ্যাস তৈরি করে, সেগুলোই অন্ত্রের জন্য নিরাপদ। দৈনন্দিন
খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনলেই আইবিএস এর অনেক
উপসর্গ কমে যায়। নিচে সকালে, দুপুরে ও রাতে কীভাবে খাবার
সাজানো যেতে পারে তার একটি ধারণা দেওয়া হলো:
সকালের নাশতায়:
দিনের শুরুটা হালকা ও সহজ খাবার দিয়ে করা উচিত, যাতে পেট
ভরে কিন্তু ভারী লাগে না।
ওটস বা হালকা ভাত
সিদ্ধ ডিম বা পোচ
কলা বা আপেল (খোসা ছাড়া)
গ্রিন টি বা লেবু পানি
পরামর্শ: দুধে সমস্যা থাকলে ওটস দুধের বদলে পানিতে রান্না
করুন।
দুপুরের খাবার
মাঝারি পরিমাণ ভাত, ডাল ও সবজি সবচেয়ে উপযুক্ত। ঝাল বা
অতিরিক্ত তেল একদম এড়িয়ে চলুন।
ভাত, মুগ ডাল
সেদ্ধ সবজি (লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা)
গ্রিল বা সিদ্ধ মাছ/মুরগি
অল্প পরিমাণ দই (যদি সহ্য হয়)
উপকারিতা: এই সংমিশ্রণ অন্ত্রকে শান্ত রাখে ও
গ্যাসের সমস্যা কমায়।
বিকেলের হালকা খাবারে
নারকেলের পানি বা জিরা পানি
হালকা বিস্কুট বা ভাজা ছোলা
পেঁপে বা কলা ছোট পরিমাণে
রাতের খাবার
রাতের খাবার সবসময় হালকা হওয়া দরকার, কারণ ঘুমের আগে হজম
প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
খিচুড়ি বা হালকা ভাত
সবজি ও ডিম ভাজি
ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানি
পরামর্শ: রাতে দুধ বা ঠান্ডা পানীয় না খাওয়াই
ভালো।
আইবিএস রোগীর
জন্য যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
আইবিএস রোগে অনেক খাবার পেটের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এসব খাবার অনেক সময় গ্যাস তৈরি করে বা অন্ত্রে পানি টেনে
আনে, ফলে পেট
ব্যথা ও ডায়রিয়া বাড়ে। নিচের তালিকাটি মনে
রাখুন:
অতিরিক্ত তেল, ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবার
দুধ, পনির, আইসক্রিম (ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে)
পেঁয়াজ, রসুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি
সফট ড্রিঙ্ক, কোল্ড কফি, সোডা
রেড মিট বা অতিরিক্ত মশলাদার খাবার
চুইংগাম ও প্রিজারভেটিভযুক্ত স্ন্যাকস
আইবিএস রোগীদের
জন্য ৭ দিনের সহজ ডায়েট চার্ট
আইবিএস রোগে
প্রতিদিন কী খাবেন, আর কী এড়িয়ে চলবেন এটা জানা খুব
জরুরি।
কেননা একটু নিয়ম মেনে খেলে পেটের ব্যথা, গ্যাস, আর
অস্বস্তি অনেকটাই কমে যায়। নিচে ৭ দিনের একটি সহজ ডায়েট
চার্ট দেওয়া হলো, যাতে সকালে, দুপুরে ও রাতে কী খাওয়া
যেতে
পারে তার ধারণা পাবেন।
দিন
নাশতা
দুপুরের খাবার
রাতের খাবার
শনিবার
ওটস + কলা
ভাত + মুরগি + সবজি
ভাত + লাউ
রবিবার
পাউরুটি + চা
ভাত + মাছ + করলা
খিচুড়ি
সোমবার
ওটস + ডিম
ভাত + মুগডাল + লাউ
খিচুড়ি + দই
মঙ্গলবার
পাউরুটি + কলা
ভাত + মাছ + সবজি
ভাত + ডিমভাজি
বুধবার
ওটস + আপেল
খিচুড়ি + সবজি
ভাত + গ্রিল চিকেন
বৃহস্পতিবার
পাউরুটি + পোচ
ভাত + ডাল + করলা
খিচুড়ি
শুক্রবার
সেমাই + ডিম
ভাত + সবজি + দই
ভাত + ডিমভাজি
ডায়েট অনুসরণের কিছু টিপস
আইবিএস
রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো
খাবারে নিয়ম আনা। আপনি যা খান, তাই আপনার অন্ত্রের
স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। তাই প্রতিদিনের খাবার ও জীবনযাপনে
কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললেই উপসর্গ অনেকটাই কমে যেতে
পারে।
একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার
খাবেন।
তিদিন একই সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে
তুলুন।
খাবার খুব গরম বা খুব ঠান্ডা অবস্থায় খাবেন না।
দুধ, ঝাল ও ভাজা খাবার একদম সীমিত করুন।
দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন।
চা, কফি বা সফট ড্রিঙ্কের বদলে গ্রিন টি বা লেবু পানি
খান।
খাবারের পর অন্তত ১৫–২০ মিনিট হাঁটুন।
পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখুন।
যেসব খাবার খেলে অস্বস্তি হয়, সেগুলোর তালিকা লিখে
রাখুন ও পরিহার করুন।
আইবিএস রোগীর জন্য
ডায়েট কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আইবিএসের ক্ষেত্রে “একই খাবার সবার জন্য নয়।” একজনের সহ্য
হওয়া খাবার অন্যজনের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই
নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে ডায়েট মেনে চলাই
বুদ্ধিমানের কাজ। সঠিক ডায়েট মেনে চললে:
পেট ব্যথা ও ফোলাভাব কমে
মলত্যাগ নিয়মিত হয়
ওষুধের প্রয়োজন কমে যায়
দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে
আইবিএস রোগীর জন্য লো-ফোডম্যাপ ডায়েট কি কার্যকর?
হ্যাঁ, অনেক রোগীর ক্ষেত্রে লো-ফোডম্যাপ ডায়েট (Low
FODMAP Diet) বেশ উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। এতে এমন
খাবার বাদ দেওয়া হয় যা অন্ত্রে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি করে,
যেমন পেঁয়াজ, রসুন, দুধ, আপেল, বা গমজাত খাবার। তবে এটি
শুরু করার আগে একজন অভিজ্ঞ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট
বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
আইবিএস রোগের সময় পানি ও পানীয় গ্রহণের নিয়ম
আইবিএস রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। পানি শরীরে হজম প্রক্রিয়া সচল রাখে, টক্সিন
বের করে দেয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। আবার
অনেকে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খেয়ে
উল্টো উপসর্গ বাড়িয়ে ফেলেন। তাই কোন ধরনের পানীয় ভালো
আর কোনটা এড়িয়ে চলা উচিত, তা জানা দরকার।
দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন।
গ্রিন টি, জিরা পানি, বা লেবু পানি হজমে সহায়ক।
ঠান্ডা সফট ড্রিঙ্ক বা কফি পেটের সমস্যা বাড়াতে
পারে।
ব্যায়াম বা হাঁটার পরে এক গ্লাস হালকা গরম পানি পান
করুন।
আইবিএস রোগে কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
আইবিএস সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হলেও সঠিক খাবার ও জীবনযাপন
মেনে চললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে
কিছু উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের
পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ অনেক সময় আইবিএসের মতো উপসর্গ
অন্য গুরুতর অন্ত্রজনিত রোগেরও হতে পারে।
বারবার বা দীর্ঘদিন ধরে পেট ব্যথা, গ্যাস বা
ফোলাভাব
মলে রক্ত আসা বা কালো রঙের মল
খাবারের পর তীব্র ডায়রিয়া বা অস্বস্তি
ওজন হঠাৎ কমে যাওয়া
ঘুমের সময়ও পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া হওয়া
নতুন উপসর্গ শুরু হলে বা আগের ওষুধে কাজ না করলে
মনে রাখবেন: আইবিএস নিজে থেকে বিপজ্জনক না হলেও, এসব
উপসর্গ অন্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে যেমন কোলন ক্যান্সার,
ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD), বা আলসার।
আইবিএস রোগ এর জন্য ডা: তারিক আখতার খানের পরামর্শ নিন
আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমে ভুগছেন? বারবার পেট
ব্যথা, গ্যাস, বা ডায়রিয়া হচ্ছে? অবহেলা না করে এখনই
অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল
সিন্ড্রোমে অভিজ্ঞ কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রো সার্জনের
পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ডা. তারিক আখতার খান বাংলাদেশের অন্যতম অভিজ্ঞ কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রো সার্জন, যিনি
IBS, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, ও অন্ত্রের জটিল রোগ রোগে
দীর্ঘদিন ধরে সফলভাবে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
আইবিএস রোগীরা হালকা, সহজপাচ্য ও কম তেল-ঝাল
খাবার খেলে ভালো থাকেন। যেমন—ভাত, মুগডাল,
লাউ, পেঁপে, কলা, আপেল, ওটস, গ্রিল বা সিদ্ধ
মাছ ও ডিম। এসব খাবার অন্ত্রকে শান্ত রাখে এবং
হজমে সহায়তা করে।
আইবিএসের কোনো একক “সেরা” ওষুধ নেই, কারণ এটি
উপসর্গভিত্তিক রোগ। কারও জন্য গ্যাস বা ব্যথা
কমানোর ওষুধ দরকার হয়, আবার কারও জন্য হজম
নিয়ন্ত্রণে রাখার। তাই নিজের অবস্থান বুঝে
একজন গ্যাস্ট্রো বিশেষজ্ঞ, যেমন ডা. তারিক
আখতার খান
-এর পরামর্শে ওষুধ খাওয়াই নিরাপদ।
না, সয়াবিন অনেকের অন্ত্রে গ্যাস তৈরি করে
এবং ফোলাভাব বাড়াতে পারে। তাই আইবিএস রোগীদের
সয়াবিন বা সয়া-জাত খাবার যেমন টোফু, সয়া
দুধ ইত্যাদি সীমিত বা একদম এড়িয়ে চলা ভালো।
আইবিএস হলে পেট ব্যথা, ফোলাভাব, গ্যাস,
কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা
দেয়। কারও ঘন ঘন পায়খানা হয়, কারও আবার
অনেক দিন যায় না। মানসিক চাপেও উপসর্গ বেড়ে
যায়।
আইবিএস রোগীদের দুধ, পনির, সফট ড্রিঙ্ক,
ঝাল-তেলযুক্ত খাবার, ফুলকপি, পেঁয়াজ, রসুন,
কফি ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলা উচিত। এসব খাবার
অন্ত্রে গ্যাস ও ব্যথা বাড়ায়।
আজই পাইলসের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ
নিন!
অস্বস্তিকে বিদায় দিন — আমরা আপনাকে সাহায্য করতে
প্রস্তুত!