অর্শ রোগ থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

অর্শ রোগ, যাকে অনেকেই পাইলস বলে থাকেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে সাধারণ গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল/ কলোরেক্টাল সমস্যাগুলোর একটি। শহর-গ্রাম উভয় জায়গায় মানুষ এই রোগে ভোগেন। বিশেষ করে অফিসে দীর্ঘ সময় বসে থাকা, ফাস্ট ফুডের অতিরিক্ত গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া এবং অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে অর্শ দিন দিন বেড়ে চলেছে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৩০–৪০% জীবনের কোনো না কোনো সময়ে অর্শে আক্রান্ত হন।

অর্শ মূলত মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে ওঠার কারণে হয়ে থাকে। যখন রক্ত জমে গিয়ে সেই শিরাগুলোতে চাপ বাড়ে, তখন সেগুলো ফুলে যায় এবং ধীরে ধীরে ব্যথা, রক্তপাত, চুলকানি ও অস্বস্তির কারণ হয়। এই ব্লগে আমরা জানব, অর্শ রোগের সঠিক চিকিৎসা, কারণ, সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে। এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন, বাংলাদেশের অন্যতম কলোরেক্টাল সার্জন অধ্যাপক ডা. তারিক আখতার খান।

অর্শ রোগ থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

অর্শ রোগ কী?

অর্শ বা পাইলস হলো মলদ্বারের শিরা ফুলে ওঠার একটি সমস্যা। আমাদের শরীরের নিচের অংশে, বিশেষ করে মলদ্বারে অনেক ছোট ছোট রক্তনালি থাকে। দীর্ঘ সময় চাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্য কারণে যখন এসব রক্তনালির ভেতরে চাপ বেড়ে যায়, তখন সেগুলো ফুলে উঠে ছোট ছোট গিঁট বা মাংসপিণ্ডের মতো দেখা দেয়। একে আমরা অর্শ বা পাইলস বলি।

প্রথমে হয়তো হালকা অস্বস্তি বা সামান্য রক্তপাত দেখা যায়, কিন্তু ধীরে ধীরে ব্যথা, টয়লেটে সমস্যায় পড়া, মলদ্বারের চারপাশে ফোলা, এমনকি বসতে কষ্ট হওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হয়। সাধারণত দুই ধরনের অর্শ দেখা যায়:

  • ইন্টারনাল অর্শ (ভেতরের অর্শ): মলদ্বারের ভেতরে হয়। প্রথম দিকে ব্যথা কম হলেও রক্তপাত দেখা যায়।
  • এক্সটারনাল অর্শ (বাইরের অর্শ): মলদ্বারের বাইরে চামড়ার নিচে হয়। এতে ব্যথা, ফোলা এবং বসতে অসুবিধা হয়।
অর্শ রোগ কী

অর্শ রোগের সাধারণ কারণ

অর্শ বা পাইলস হওয়ার পেছনে মূলত আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস ও জীবনযাত্রাই সবচেয়ে বেশি দায়ী। অনিয়মিত খাবার, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং দীর্ঘসময় বসে থাকা—এসব কারণে মলদ্বারের শিরায় চাপ তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে অর্শ রোগে পরিণত হয়। নিচে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো:

  • দীর্ঘ সময় কোষ্ঠকাঠিন্য থাকা
  • আঁশ কম খাবার খাওয়া
  • পর্যাপ্ত পানি না পান করা
  • নিয়মিত ঝাল, ভাজাপোড়া বা তৈলাক্ত খাবার খাওয়া
  • দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা (অফিস জব/ড্রাইভার ইত্যাদি)
  • গর্ভাবস্থা বা সন্তান জন্মের পর চাপ
  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
অর্শ রোগের সাধারণ কারণ

অর্শ রোগের প্রধান লক্ষণসমূহ

অর্শ রোগের উপসর্গ সাধারণত ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। শুরুতে হালকা অস্বস্তি থাকলেও সময়ের সাথে সাথে ব্যথা, রক্তপাত ও মলদ্বারে ফোলা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এগুলো চিনে নেওয়া জরুরি, যাতে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া যায়। নিচে অর্শ রোগের কিছু সাধারণ উপসর্গ উল্লেখ করা হলো:

অর্শ থেকে মুক্তির ঘরোয়া ও প্রাথমিক সমাধান

অর্শ রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা ও ঘরোয়া যত্ন নেওয়া খুব কার্যকর হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান ও নিয়মিত ব্যায়াম অনেক সময় সার্জারি ছাড়াই অর্শের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

  • প্রতিদিন ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন
  • আঁশসমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ডাল, ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করুন
  • ঝাল, তেলেভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন
  • নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন
  • টয়লেটে দীর্ঘসময় বসে থাকবেন না
  • কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে ফাইবার সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করতে পারেন

অর্শ রোগের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি

যখন ঘরোয়া বা প্রাথমিক পদ্ধতিতে কাজ হয় না, তখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে আধুনিক চিকিৎসা নিতে হয়। আগের দিনে অর্শের চিকিৎসা ছিল সময়সাপেক্ষ ও ব্যথাদায়ক। কিন্তু এখন আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত সার্জারি পদ্ধতির কারণে অর্শ রোগ দ্রুত, নিরাপদ ও প্রায় ব্যথাহীনভাবে নিরাময় করা সম্ভব।

১. ঔষধ ও কনজারভেটিভ ট্রিটমেন্ট

অল্প পর্যায়ের অর্শ রোগে কিছু ওষুধ ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনে আরাম পাওয়া যায়।

২. রাবার ব্যান্ড লাইগেশন

মলদ্বারের ভেতরের অর্শের গোড়ায় একটি রাবার ব্যান্ড পরানো হয়, এতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে অর্শ শুকিয়ে যায়।

৩. ইনফ্রারেড বা লেজার ট্রিটমেন্ট

এটি দ্রুত, ব্যথাহীন এবং নিরাপদ একটি পদ্ধতি। লেজারের মাধ্যমে অর্শের শিরা শুকিয়ে দেওয়া হয়।

৪. সার্জারি

বড় বা জটিল অর্শে সার্জারি করতে হয়। বর্তমানে স্ট্যাপলার সার্জারি বা লেজার সার্জারি ব্যবহার করা হয়, যা আগের তুলনায় অনেক আরামদায়ক এবং দ্রুত নিরাময় হয়।

অর্শ থেকে স্থায়ী মুক্তি পেতে করণীয়

অর্শ রোগ শুধু সাময়িক চিকিৎসায় পুরোপুরি সারে না, এর জন্য প্রয়োজন সঠিক জীবনযাপন ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা এবং আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করলেই অর্শ থেকে স্থায়ী মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

  • সঠিক সময়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান
  • খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় স্থায়ী পরিবর্তন আনুন
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন
  • কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলুন
  • চিকিৎসার পর নিয়মিত ফলো-আপ করুন

অধ্যাপক ডা. তারিক আখতার খান – আপনার বিশ্বস্ত সার্জন

অর্শ রোগ অনেক সময় ফিশার, ফিস্টুলা বা ক্যান্সারের মতো গুরুতর সমস্যার সাথেও মিল খেয়ে যায়। তাই নিজের মতো ওষুধ খাওয়া বা লজ্জার কারণে চিকিৎসা দেরি করা উচিত নয়। একজন অভিজ্ঞ কলোরেক্টাল সার্জন সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারেন এবং স্থায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

অর্শ রোগের স্থায়ী চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক সার্জারি এখন সহজলভ্য। ডা. তারিক আখতার খানের পরামর্শ নিন, তিনি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষিত কোলোরেক্টাল সার্জন (FRCS, Glasgow), ১৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা এবং হাজারের অধিক সফল অর্শ সার্জারি সম্পন্ন করেছেন।

অর্শ রোগ সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর

হ্যাঁ। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও আধুনিক চিকিৎসা (যেমন লেজার সার্জারি, রাবার ব্যান্ড লিগেশন ইত্যাদি) গ্রহণ করলে অর্শ থেকে স্থায়ী মুক্তি সম্ভব।

না। প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময় শুধু ওষুধ, ফাইবারযুক্ত খাবার, পর্যাপ্ত পানি ও ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে জটিল অবস্থায় সার্জারি প্রয়োজন হয়।

রক্তপাত, মলত্যাগে ব্যথা, মলদ্বারের চারপাশে ফোলা বা মাংসপিণ্ড বের হওয়া, চুলকানি ও অস্বস্তি—এসবই অর্শের সাধারণ লক্ষণ।

আঁশসমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ডাল, ফলমূল, এবং প্রচুর পানি পান করা জরুরি। ঝাল, তেলেভাজা ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলা উচিত।

যদি নিয়মিত রক্তপাত হয়, ব্যথা বেড়ে যায়, অথবা মলদ্বারে বড় ফোলা দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জনের কাছে যাওয়া উচিত।
Call Receptionist
Call for Appointment
Make An Appoinment

Appointment Scheduling Time: 9 AM - 10 PM

  1. Dhanmondi Diagnostic & Consultation Center
  2. Impulse Hospital
  3. Labaid Cancer Hospital
Arrow